আগামীকাল চট্টগ্রামে ‘পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ এর সমাবেশ ও মিছিল:
অংশ নেবেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): আগামীকাল মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) চট্টগ্রামে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ এর উদ্যোগে সরকারের নিকট পার্বত্য চুক্তি দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে গণসঙ্গীত, সংহতি সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ২:০০ টায় চট্টগ্রামের লালদিঘীর পাড়ে জেলা পরিষদ চত্বরে এই অনুষ্ঠান শুরু হবে বলে আইপিনিউজকে নিশ্চিত করেছেন আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান।
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সম্মিলিত বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলুন’ শ্লোগান নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে উক্ত কর্মসূচিতে দলে দলে যোগদানের আহ্বানও জানানো হয়েছে। পাহাড়ি-বাঙালি, আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সর্বস্তরের মানুষ এতে অংশগ্রহণ করবেন বলেও জানান আয়োজকরা।
উক্ত কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করবেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি ও সাংসদ রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুল রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি শাহ আলম, ঐক্য ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ, জাসদ এর চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দীন বাবুল, গণফোরামের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহিম জাহাঙ্গীর, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ এর অন্যতম যুগ্ম সমন্বয়কারী ও নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, উক্ত প্লাটফর্মের অন্যতম যুগ্ম সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরিণ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য এডভোকেট প্রদীপ চৌধুরী, উদীচি শিল্পীগোষ্ঠীর চট্টগ্রামের সভাপতি ও সাংবাদিক জসীম চৌধুরী সবুজ, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত ধামাই এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ প্রমুখ।
এছাড়া উক্ত সমাবেশ ও মিছিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ সহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতৃৃবৃন্দ সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখবেন বলে আইপিনিউজকে জানিয়েছেন আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান।
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ এর অন্যতম যুগ্ম সমন্বয়কারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী আইপিনিউজকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সাথে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবি সংগঠনগুলোসহ বাংলাদেশের প্রগতিশীল দলগুলো যুক্ত আছে। এই আন্দোলনের বৃহত্তর লক্ষ্য হচ্ছে- বাংলাদেশের যে আপামর জনসাধারণ আছে তাদের মধ্যে পার্বত্য চুক্তি নিয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো ও সেতুবন্ধ রচনা করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক আইপিনিউজকে আরো বলেন, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ পার্বত্য চুক্তির মধ্য দিয়ে স্বীকার করে নিয়েছে যে, সেখানে একটি সংঘাত ছিল। সেই সংঘাত থেকে বেরিয়ে এসে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে মেনে নিয়ে সকল জনসাধারণ বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া। জনগণের পক্ষেই রাষ্ট্র এই চুক্তি করেছে। বৃহত্তর জনগণ ২৫ বছর এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করেছে। কিন্তু সেই চুক্তি বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের যে দায় আছে সেটা এখনও পরিপূরণ হয়নি। তাছাড়া চুক্তি স্বাক্ষরকারী দু’টি পক্ষের বক্তব্যের মধ্যেও ভিন্নতা আছে। সে জায়গাটাতে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানোয় এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। চুক্তির মধ্য দিয়ে দু’টি পক্ষের মধ্যে যে আস্থা এবং বিশ্বাস ছিল তার মধ্যে ঘাটতি তৈরী হয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণ করে পার্বত্য চুক্তিতে পাহাড়ী জনগণের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করায় আমাদের মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান আইপিনিউজকে বলেন, এই কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে আমরা সরকারকে একটি বারতা দিতে চাই। আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২৫ বছর আগে তাদের অধিকারের প্রশ্নে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু এই চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরী হয়েছে সেই চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব এবং পাহাড়ের আদিবাসীদের সাথে সমতলের মানুষের এই আন্দোলনের স্বপক্ষে যোগসূত্রিতা তৈরী করা দরকার। এই কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য হল- পাহাড়ী-বাঙালির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার যেন আরো উদ্যোগী ভূমিকা নেয় তার জন্য সরকারের নিকট চাপ সৃষ্টি করা।
উক্ত কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে সরকারের নিকট উত্থাপিত ৫ দফা দাবি নিম্নরূপঃ
১. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. পাহাড়ে সামরিক কর্তৃত্ব ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের স্থায়ী অবসান করতে হবে।
৩. আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক করা এবং স্থানীয় শাসন নিশ্চিত করতে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক এসব পরিষদের যথাযথ ক্ষমতায়ন করতে হবে।
৪. পার্বত্য ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের পুনর্বাসন করে তাদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. দেশের মূল স্রোতধারার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।