অসুস্থ স্বামী এবং দুই নাবালক সন্তান নিয়ে দীপনা চাকমা’র লড়াই

আমার স্বামী দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে শরীরে হেপাটাইটিস (ক্রনিক) রোগ বহন করছে। রোগ ধরা পড়ার পর থেকে তাঁর চিকিৎসা করানো হয়েছিল। তাঁর এই রোগ বেড়ে গেলে লিভার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়।অনেক ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানোর পর রোগটা নির্মূল না হলেও কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে। তার মধ্যেও নানা সময়ে হোমিও,ডাক্তারি,আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা চলমান ছিল। তাঁর এই রোগ ২০১৮ সালের শেষের দিকে আবারও বেড়ে যায়। অথচ আমাদের সম্বল বলতে তেমন কিছু নেই।
এই কথাগুলো বেশ ভারাক্রান্ত মনে নিজের ফেসবুকের ওয়ালে লিখেছিলেন দীপনা চাকমা দীপু।কিবোর্ডে অঙ্গুল চালানোর মুহূর্তে ছিল সংকোচ আর সামাজিক অবস্থানের সাথে বাস্তবতার তুমুল এক বিতর্ক ।অসুস্থ স্বামী আর দুই নাবালক সন্তান নিয়ে থাকেন খাগড়াছড়ি সদরের উপালিপাড়া গ্রামে। চার জনের এই সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম এই সংগ্রামী নারী। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া বড় ছেলে আর চার বছর বয়সী মেয়ে, সাথে লিভার সিরোসিসের কঠিন রোগে আক্রান্ত স্বামী। এই কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েও থেমে যাননি তিনি। ভেঙে পড়েননি।কঠিন জীবন যুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন দীপনা চাকমা। নিয়মিত লড়ছেন কঠিন এক বাস্তবতার সাথে।তাঁর এই লড়াইয়ের ছাপ পাওয়া যেতে পারে যখনি তাঁর ফেসবুকের ওয়ালে একটু ঢু মেরে আসতে পারেন।
দীপনা চাকমা দীপু নামের তাঁর নিজস্ব ফেসবুকের ওয়াল ঘুরে দেখা যায় তাঁর স্বামীর চিকিৎসা এবং নাবালক সন্তানদের দায়িত্বের বোঝা নিয়ে টেনে নেওয়া সংসার চালাতে প্রতিদিন অর্ডার নিচ্ছেন নানা বাহারী পদের খাবার। পাহাড়ী স্বাদের বাশেঁর চোঙায় করে ছোট মাছ, শুকরের মাংস রান্না যেটাকে চাকমা’রা বলে থাকে ‘চুঙো গরাং’। সেই সাথে সিঙারা, চানাচুর, রোল,পিঁয়াজো, সরিষার তেল সহ আরো বিভিন্ন পদের খাবার অনলাইনে মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে সেই পদের কাঁচামাল বাজার থেকে ক্রয় করে আবার নিজের বাসায় রান্না করে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সেগুলোকে বিভিন্ন জায়গায় ডেলিভারী দেওয়ার কাজটিও সুনিপুণভাবে করে যাচ্ছেন এই সংগ্রামী নারী।
তিনি আরো লিখেছেন, আমার স্বামীর ভাইবোনেরা মিলে সেসময় (২০১৮ এর আগে) চিকিৎসার টাকা দিলে ভারতের চেন্নাইতে গিয়ে চিকিৎসা করে। এছাড়া টাকা সংকুলান না হওয়ায় একমাত্র সম্বল আগে থেকে কিনে রাখা দুটি ছোট সেগুন বাগান বিক্রি করে টাকা যোগার করতে হয়।চেন্নাইয়ে চিকিৎসা করানোর পর আমার স্বামী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা একটা বছর কোনরকম চালিয়ে নেয়ার পর পরবর্তীতে আর চলমান রাখা সম্ভব হয়নি। কারণ, তাঁর দুই মাসের ওষুধের দাম ইন্ডিয়ান রুপিতে ২১৫০০। কিন্তু এত টাকার সংস্থান করার সামর্থ কী আমার আছে?
এক মুঠো আলাপে আইপিনিউজকে তিনি বলেন, এই কঠিন বাস্তবাতার সাথে লড়াই করছি। চলতি বছরের (২০২০) শুরুতে আমার স্বামীর রোগ আবারও বেড়ে যায়। আর্থিক ভাবে এমন বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছি যা সংসার পর্যন্ত চলছে না। আবারও ইন্ডিয়াতে চিকিৎসায় যাওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে কিন্তু আমাদের হাতে বলতে গেলে কোন টাকা নেই। অল্পস্বল্প জমি যেটা আছে তাও বন্ধকে আছে।
তবে এমন কঠিন সময়ে তাঁর এই সংগ্রামের সাথে সংহতি জানিয়ে অনেকেই সামিল হয়েছেন সহযোগীতার সম্বল নিয়ে। স্বামীর চিকিৎসার সহায়তায় গঠিত তহবিলে অনেকেই শরিক হচ্ছেন। সবমিলিয়ে গত ২৯ আগষ্ট পর্যন্ত ২,৬৮,২৩৭ টাকা উত্তোলিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ভারতে চিকিৎসার জন্য আরো কমপক্ষে ৬ লক্ষ টাকা প্রয়োজন বলে জানান দীপনা চাকমা।
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত স্বামী এবং দুই
নাবালক সন্তান নিয়ে লড়াই করা এই নারীর সংগ্রামের সাথে সামিল হতে আপামর মানবতাবাদী মানুষের কাছে আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। বিকাশ এবং রকেট একাউন্ট থেকে ০১৮৩৪০১৫০৯৮ নাম্বারে সহযোগীতা পাঠানো যাবে। তাছাড়া দীপনা চাকমা’র ব্যক্তিগত নগদ একাউন্ট নাম্বার -০১৫৩১৭০১৯১০ তেও সহযোগীতা পাঠানো যাবে বলে তিনি জানান। এছাড়া নিম্নোক্ত ব্যাংক একাউন্ট নাম্বারেও সহযোগীতা পাঠানো যাবে –
ব্যাংক একাউন্টনাম দীপু চাকমা
সঞ্চয়ী হিসাব নং-১১৯৯০
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
খাগড়াছড়ি শাখা।