মতামত ও বিশ্লেষণ

অতীত,বর্তমান ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের হিল চাদিগাঙ (প্রথম খন্ড) – ধীর কুমার চাকমা

ভূমিকা: অতীত আর বর্তমানকে নিয়েই ভবিষ্যৎ। এক সময় এসব নিয়ে মানুষ খুব একটা ভাবেনি। প্রকৃতির খেয়াল-খুশী মাপিক যখন যা ঘটেছে, তা মানুষ নীরবে মাথা পেতে নিয়েছে। কার্যকারণ সম্পর্কে মানুষের কোন কৌতুহলও জাগেনি। অধুনা কিন্তু পৃথিবীর কোন কিছুই মানুষের নজর এড়াতে পারে না। সব কিছুই মানুষের নখ দর্পণে। মানব সমাজ বিকাশের এক পর্যায়ে প্রকৃতির কাছে অসহায় মানুষ, হিংস্র জন্তু জানোয়ারের আক্রমণ থেকে বাাঁচার জন্য সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় আয়ত্ব করতে হয়েছে টিকে থাকার অভিনব কায়দা-কৌশল। অতীতের সে সবই এখন ইতিহাস; যার কাছ থেকে সম্যক ধারণা নিয়ে মানুষ আধুনিক সভ্যতার গোড়াপত্তন করেছে। সে যাই হোক,এখন ইতিহাস পর্যালোচনা নয়। বিষয়টা হচ্ছে, ভবিষ্যতে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে প্রসঙ্গক্রমে তার অতীত ও বর্তমানের দিকে কিছুটা আলোকপাত করা। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে সমগ্র দেশের এক দশমাংশ জায়গা জুড়ে দশ ভিন্ন ভাষাভাষী ১৩টির অধিক আদিবাসী জুম্ম জাতিগোষ্ঠীর আবাসভূমি, পার্বত্য চট্টগ্রাম। ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলকে নিয়ে জেলা ঘোষণার পর “পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা” নামকরণ হয়। আর তখন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বলা হয় ‘‘ চিটাগং হিল ট্রেক্টটস্’’ বা চলতি ভাষায় “হিল চাদিগাঙ”। ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদদৌল্লার পরাজয়ের পর বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। শুরু হয় ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনামল। ’৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হয়। জুম্ম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়ে ব্রিটিশ ভারত ত্যাগ করে। তখন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাগ্যাকাশ কালো মেঘাচ্ছন্ন হয়। ব্রিটিশ-ভারতে সব জুম্মরা ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসিন্দা তথা এক মায়ের সন্তানের মত।

প্রথমতঃ দেশ বিভাগ, দ্বিতীয়ত কাপ্তাই বাঁধের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম্রা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। কালের বিবর্তনে আজকে তারা উত্তরকূল্যা, দেজকূল্যা আর দক্ষিণকুল্যা হিসেবে (ভারত -বাংলাদেশ-বার্মা) তিন প্রতিবেশী রাজ্যের অধিবাসী। পাকিস্তান শাসনামল থেকে আজকে (১৯৪৭-২০১৮) বাংলাদেশ শাসনামল পর্যন্ত দীর্ঘ ৭১ বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পুঞ্জিভূত সমস্যার পরিণতি হচ্ছে আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সংকট; যা পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। এই সংকট নিরসন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষে জাতিধর্মবর্ণ ও দলমত নির্বিশেষে বিশ্বের সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতা অনস্বীকার্য।

এক নজরে পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসনতান্ত্রিক প্রেক্ষাপটঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামে এক সময় স্বাধীন রাজার আমল ছিল। “১৭২৪ সালে চাকমা রাজ্য মোগলদের দ্বারা আক্রান্ত হলে চাকমা রাজা দলবলসহ রোসাঙ্গ রাজ্যে পশ্চাৎপচরণ করেছিলেন। কিছুদিন পর তিনি চাকমা রাজ্যে প্রত্যাবর্তন করেন। রোসাঙ্গ (আরকান) রাজ তাঁকে রাজা উপাধিতে ভূষিত করেন। অতীতে চাকমা রাজ্যে বহু সংখ্যক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বাস ছিল। তাদের মধ্যে চাকমা,রিয়াং,ত্রিপুরা ও মারমা ইত্যাদি জাতিসমূহ ছিল উল্লেখযোগ্য। তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ধর্মীয় দিক দিয়ে চাকমা এবং ত্রিপুরাদের মধ্যে পার্থক্য ছিল। ত্রিপুরারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী আর চাকমারা হলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এই ধর্মীয় বিভেদ থাকা সত্ত্বেও চাকমাদের সাথে ত্রিপুরাদের কোন সময়েই সম্পর্কের অবনতি হয় নাই। চাকমাদের সাথে ত্রিপুরাদের সু-সম্পর্ক বর্ণনা প্রসঙ্গে মিঃ জে.পি.মিলস্ লিখেছেন, “ÒIn every way their (the tripuras)material culture appears to be identical with that of the Chakma.” ” অতীতে মারমাদের সাথে চাকমাদের সম্পর্ক ত্রিপুরাদের মতো যথেষ্ট হৃদ্যতাপূর্ণ নাহলেও অমিত্রতাসূলভ ছিল না।” [সূত্রঃ পৃষ্ঠা ১৪, ব্রিটিশ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে চাকমা জাতির প্রতিরোধ সংগ্রাম (১৭৭২-১৭৯৮),লেখক-অধ্যাপক,ড.সুনীতি ভূষণ কানুনগো]। মং সার্কেল রাজবাড়ীর সাথে রাঙ্গামাটির চাকমা রাজবাড়ীর সামাজিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। মং রাণীর নাম রাণী নীহার বালা রায়,বাবা নলিনাক্ষ রায়। ধর্মীয় ক্ষেত্রে তারা উভয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তাদের মধ্যেকার মেলামেশা বর্তমানেও ঘনিষ্ট পর্যায়ে। চাকমা পাড়া ও মারমা পাড়া পারস্পরিক সংলগ্ন এলাকায় হওয়াতে পরস্পরের ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও চেহারা না দেখে এমনি কথার মধ্য দিয়ে চাকমা, মারমা চেনাই যায়না। দেশ বিভাগের সময় সকল জুম্মরা ভারত,বার্মা ও বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছড়িয়ে পড়ে। যাহোক, মূল কথায় আসা যাক।

মোঘল ও ব্রিটিশ আমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল প্রায়ই একটা যুদ্ধ ক্ষেত্রের মতো। ১৮৬০ সালের আগে চট্টগ্রাম অ লটি কখনো ত্রিপুরা মহারাজা,কখনো আরাকান রাজা,কখনো মোঘলদের অধীনে ছিল। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের আগমন ঘটেছে ১৪১৮ সালে। চাকমা রাজার প্রথম বসতি হয় কদমতলী (বান্দরবন), তারপর রাঙ্গুনিয়ায়। ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা জেলা করার পর চন্দ্রঘোণাতে জেলা সদর দপ্তর স্থাপিত হয়।পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার সদর দপ্তর চন্দ্রঘোণা থেকে রাঙ্গামাটিতে স্থান্তরিত হলে ব্রিটিশ সরকারের পরামর্শে চাকমা রাজ দফতর রাজানগর থেকে রাঙ্গামাটিতে স্থানান্তর হয়। উল্লেখ্য, ১৮৬৯ সালের ১ জানুয়ারী চন্দ্রঘোনা থেকে রাঙ্গামাটিতে জেলা সদর দফতর স্থানান্তরিত হয়।[সূত্রঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের ইতিকথা-শরদিন্দু শেখর চাকমা]। মূলতঃ ১৪১৮ সালে চাকমা রাজার শাসনকাল শুরু হয়। তার আগে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল ত্রিপুরা মহারাজার শাসিত রাজ্য। ‘‘সপ্তদশ শতকে অর্থাৎ ১৬৬৬খ্রীঃ আওরঙ্গেেজবের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম মোঘল অধিকারে আসে। ১৬৭০ সালের ১৫ অক্টোবর বাংলার নবাব মির কাশিম পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পুরো চট্টগ্রামের শাসনভার ব্রিটিশ ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানীর হাতে তুলে দেন। তবে মোগল ও ইংরেজ শাসন নীরবে চাকমারা মেনে নেয়নি। রাজা জানবক্স খাঁর নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বিরুদ্ধে (১৭৭২) যুদ্ধ শুরু হয়। বেশ কয়েক দফা (সম্মুখ যুদ্ধ বাদেও গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করে) যুদ্ধে জয়লাভ করলেও শেষ পর্যন্ত ১৭৮৫ সালে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী আর চাকমাদের সাথে সমজোতা চুক্তি হয়। তারপরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্রিটিশ শাসন পুরোপুরি কায়েম হয়। ১৮৮১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে চাকমা সার্কেল,মং সার্কেল ও বোমাং সার্কেল এই তিন সার্কেলে বিভক্ত করে। পরবর্তীতে প্রত্যেকটি সার্কেল অনেকগুলি মৌজায় বিভক্ত করে দেয়া হয়। তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে সাধারণ প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ১৮৮১ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ফ্রন্টিয়ার পুলিশ আ্যাক্ট,১৮৮১’ চালু করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের সমন্বয়ে স্বতন্ত্র স্থানীয় পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা হয়। ১৯০০ সালের ১ মে ব্রিটিশ সরকার বহুল পরিচিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি- ১৯০০ (Chittagong Hill Tracts Regulation 1900 Act) জারী করে। ১৯০০ সালের ১৭ মে কলকাতা গেজেটে এটি প্রকাশ করা হয়। এই আইন কার্যকর হওয়ার পরও বহুবার সংশোধন করা হয়েছিল। ১৯০০ সালের আইন ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে পুনর্বিন্যস্ত করা হয়েছিল। তাই এই আইনের অন্তর্নিহিত কতিপয় ধারা জুম্মদের জন্য চরম অবমাননাকর ও প্রতিক্রিয়াশীল হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নেতৃবৃন্দ কিন্তু ওই এলাকার ভূমিতে তাদের অধিকারসহ জুম্ম জাতিগোষ্ঠীগুলোর সংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণে ১৯০০ সালের শাসনবিধিকে রক্ষাকবচ হিসেবে মনে করতো। কারণ ১৯০০ সালের আইন সংশোধন এবং পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে সমতলের জাতীয় সংগ্রামের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হলেও এই আইন পার্বত্য চট্টগ্রামে অ-উপজাতীয়দের (বাঙালি) অভিবাসনের প্রবল ¯্রােতকে বহুলাংশে রোধ করতে সক্ষম হয়েছিল।” (সূত্রঃ জুম পাহাড়ে শান্তির ঝরনাধারা-ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি,পৃঃ২৫, পৃঃ২৬,পৃঃ২৭)। তাই পাকিস্তানামল এবং আজকে বাংলাদেশ আমলের মতো করে ব্রিটিশ আমলে পার্বত্য চাটাগ্রামে বহিরাগত সেটেলার বাঙালি অনুপ্রবেশ অবাধে ঘটতে পারেনি।

জুম্ম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের গতিধারাঃ

১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয়। দেশ বিভাগের আগেই (পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা রাজাসহ) উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা অমুসলমান বিধায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টা চালান। তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসমিতির নেতা ¯স্নেহকুমার চাকমা ও কামিনীমোহন দেওয়ানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মহাত্মাগান্ধী, আচার্য কৃপালিনী,সর্দার বল্লভ ভাই পেটেল ও কংগ্রেস সভাপতি ড.রাজেন্দ্রসহ প্রমূখ কংগ্রেস নেতৃবর্গের সাথে সাক্ষাৎ করে ভারতে তাদের অন্তর্ভূক্তির ব্যাপারে আলোচনা করেন। কিন্তু র‌্যাডক্লিব কমিশন পাহাড়ীদের এই দাবী মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলমান অধ্যুষিত পাকিস্তানে অন্তর্ভূক্ত করে। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগের পর ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানে নিজেদের অন্তর্ভূক্তির প্রশ্নে অমুসলিম উপজাতীয়দের মধ্যে সৃষ্ট দ্বিধাগ্রস্থ মনোভাবের কারণে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর মনে তাদের (উপজাতীয়দের) বিরুদ্ধে প্রতিহিংসপরায়ণ মনোভাবের সৃষ্টি হয়। ব্রিটিশ শাসকরা যে বিষবৃক্ষ রোপণ করেছিলেন,তারই জের হিসেবে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ওপর তাদের একতরফা জবরদস্তিমূলক সিদ্ধান্তসমূহ চাপিয়ে দিতে থাকে। পক্ষান্তরে ১৯০০ সালের শাসনবিধির আড়ালে দেশের অবশিষ্ট অঞ্চল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগণের মধ্যে একদিকে আত্মমূখীন মনোভাব,অন্য দিকে এক ধরণের এলিনিয়েশন বা বিচ্ছিন্নতাবোধের সৃষ্টি হয়।(সূত্রঃ জুম পাহাড়ে শান্তির ঝরণা ধারা-ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি-পৃষ্ঠা ২৫)। শুরুতে এভাবে পাকিস্তানে জুম্মদের নাগরিক জীবনের সূত্রপাত হয়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দু’দশকাধিককাল ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের প্রতি পাকিস্তান সরকারের বিমাতাসূলভ রাজনৈতিক যুগের অবসান ঘটে; ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর,দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তাক্ত স্বাধীনতার যুদ্ধের মাধ্যমে।

স্বাধীন রাজার আমল থেকে রাঙ্গামাটি ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের কেন্দ্র বিন্দু ও প্রাচীন শহর। ’৭১-এর মুক্তি যুদ্ধের সময় পাক সেনারা সর্বপ্রথমে চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি শহরের দখল নেয়। তখনকার পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে ‘জুম পাহাড়ে শান্তির ঝরণাধারা’ বই-এ উল্লেখ করা হয় যে,-“তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি এমনই উভয় সংকটাপন্ন ছিল যে, পাকিস্তানী দালালদের চাপের মুখে উপজাতীয় সমাজপতিরা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন নাকরে পাকিস্তানকে সমর্থন করতে বাধ্য হন। এপ্রসঙ্গে আরো উল্লেখ করা হয় যে, দ্বিজাতি তত্ত্বের বিশ্বাসী পাকিস্তানী প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী ভিন্ন ধর্মাবলম্বী পাহাড়ী জনগণকে কখনোই সুনজরে দেখেনি। ১৯০০ সালের আ্যাক্ট বহাল থাকলেও ১৯৪৮ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ফ্রন্টিয়ার পুলিশ অ্যাক্ট -১৮৮১ বাতিল করে দেয়া হয়। (সূত্রঃ জুম পাহাড়ে শান্তির ঝরণা ধারা-ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি-পৃষ্ঠা ২৫)। পাকিস্তানের আমলে এভাবে লুপ্ত হয় পাহাড়ী পুলিশ বাহিনীর অস্তিত্ব। এরকম পরিস্থিতি থেকে পাকিস্তান সরকারের প্রতি জুম্মদের বীতশ্রদ্ধ মনোভাবের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধে জুম্মদের অংশ গ্রহণ প্রসঙ্গে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও বলতে হয়, স্বভাবগতভাবে সাধারণ জুম্মরা ছিল সহজ-সরল প্রকৃতির। তাদের এই সহজ-সরলতার সুযোগে সকল সরকারের আমলে জুম্মরা কেবল শাসিত-শোষিত হয়েছিল। প্রতিটি সরকারের আমলে শাসকগোষ্ঠীর শাসন শোষণের জগদ্দল পাথরের চাপে জুম্মদের সভ্যতার বিকাশ দ্রুত ঘটতে পারেনি। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বিভিন্ন সরকারের আমলে বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠী দ্বারা জুম্মদের সম্পর্কে যারযার মনগড়া মন্তব্য করে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল জুম্মদেরকে। তাদের সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে কোন সরকার আমল দেয়নি। ফলে শাসকগোষ্ঠীর এক কলমের খোচায় একটা ধারা সংশোধন আর এক কলমের খোচায় একটা আইন প্রণয়ণ ছিল ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা। অথচ সে সবের কোনটাই সহজে জুম্মদের দৃষ্টি গোচর হয়নি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নিজস্ব প্রথাগত রীতিনীতি দিয়ে জুম্মদের সমাজ চলে আসছিল। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্র্কিত কোন সরকারী আইন রদ-বদল নিয়ে সাধারণ জুম্মরা খবর নেয়ার জরুরী প্রয়োজনবোধ করেনি।

১৭৭২-১৭৯৮ খ্রীঃ দফায় দফায় চাকমাদের সাথে ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠীর যে যুদ্ধ, সেযুদ্ধে চাকমারা পরাজিত হলেও তাতে করে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে জুম্মদের মধ্যে জুম্ম জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল বলা যায়। সেই থেকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনের জন্য ভাগ কর শাসন কর নীতিকে সুকৌশলে প্রয়োগ করার উদোগ নিয়েছিল দেশ বিভাগের সময়। তাই ব্রিটিশ চলে যাবার সময় যাদের সাথে জুম্মদের খাওয়া-দাওয়া,পোষাক-পরিচ্ছদ,কথা-বার্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আদৌ মিল নেই, সেই মুসলমান অধ্যুষিত পাকিস্তানে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঢুকিয়ে দিয়ে যায়। সেই দিন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের জন্য আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়েছিল। উগ্র ইসলামিক ধর্মান্ধ পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর সাথে সহজ-সরল জুম্মরা পেরে উঠেনি। অপরদিকে জুম্ম সমাজ সামন্ততন্ত্রে আবদ্ধ থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামে শক্তিশালী জুম্ম জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠতে পারেনি। শেষতক সদ্যস্বাধীন পাকিস্তান সরকারের করা দেশদ্রোহীতার মামলা মাথায় নিয়ে স্নেহকুমার চাকমা এবং গণেশিয়াম দেওয়ানের মতো জুম্ম নেতৃবৃন্দকে দেশছাড়া হতে হয়েছিল। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার মামলা করলেও তাতে করে তাদের অনুস্মৃত আন্দোলনের অপমৃত্যু ঘটাতে পারেনি। ¯স্নেহবাবুরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের আন্দোলনের যে বীজ বপন করেছিলেন (তৎকালীন, পাকিস্তান, ভারত.বার্মা ইত্যাদি), যেখানে রয়েছেন সেই বীজ স্বযত্নে রক্ষা করেছিলেন। হয়েছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ। একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল ¯স্নেহ কুমার চাকমা ও তাদের পূর্ব পুরুষদের জন্ম ভূমি। তাই ভারতের মাটিতে তাদের সমাধি রচিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের সাথে তাদের ছিল অবিচ্ছেদ্য নাড়ীর টান।

জীবদ্দশায় ¯স্নেহবাবুরা প্রতিনিয়ত নিজেদের জন্মভূমির কথা, জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের কথা নিয়েই জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেছিলেন। আদিবাসী জুম্ম জাতীয় সংস্কৃতি নিয়েই তারা পরিপুষ্ট হয়েছিলেন। ভারত বিভক্তির আইন অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি অমুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে ভারতে অন্তর্ভূক্ত হবার কথা। তাছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রে স্নেহবাবুদের উদ্দেশ্য হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম করা। ভারত বিভক্তির সময় শুরু থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য সেরকম একটা সংবিধি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য্য ছিল। তাই হতে পারেনি বিধায় ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকে অদ্যাবধি জুম্মরা বার বার প্রতারিত হয়ে আসছে। অতীতের ব্যর্থতার ইতিহাস পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের নবীন প্রজন্মকে বার বার পীড়া দেয় ও আন্দোলিত করে। তাই ’৪৭ সালে সেই আন্দোলনের পুনজাগরণ হয়েছে ষাট দশকে। বলতে হয় পঞ্চাশ দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারত ডোমিনিয়নে অন্তর্ভূক্তির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যেমনি তৎকালীন ছাত্র নেতা ¯স্নেহবাবু চাকমার অভ্যূদয়, তেমনি তদানীন্তন পাকিস্তানের আমলে ষাট দশকের ছাত্র নেতা (১৯৫৬) মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএনলারমা)’র অভ্যূদয় ঘটেছিল কাপ্তাই বাঁধে ক্ষতিগ্রস্থ পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের যথাযথ পূনর্বাসনের দাবীতে সংঘটিত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তাঁর অভ্যূদয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিক উস্মোষিত হয়। তাই ১৯৪৭, ১৯৫৬, ১৯৬০, ১৯৬২, ১৯৭২,১৯৭৩, ১৯৮৬ ও ১৯৯৭ সাল পার্বত্য চট্টগ্রামের আত্ম নিয়ন্তণাধিকার আদায়ের আন্দোলনে একেকটি মাইল ফলক হিসেবে পরিচিহ্নিত।

প্রসঙ্গতঃ যেটুকু না বললে নয়,তা হচ্ছে পাকিস্তানের গণপরিষদ কর্র্তৃক ১৯৫৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র গৃহীত হয়। পাকিস্তানের এই শাসনতন্ত্রে “১৯০০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি” দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি ‘পৃথক শাসিত অঞ্চলরূপে’ ঘোষণা করা হয়। ১৯৬২ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের দ্বিতীয় শাসনতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। এই দ্বিতীয় শাসনতন্ত্রেও ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ও ১৯৫৬ সালের পাকিস্তান শাসনতন্ত্রে ব্যবহৃত “পৃথক শাসিত অঞ্চল” শব্দের পরিবর্তে “উপজাতীয় অঞ্চল” শব্দ ব্যবহার করে “১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি” কে পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসন পরিচালনার আইন ঘোষণা করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে “উপজাতীয় অঞ্চলের মর্যাদার স্বীকৃতি” দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর বাংলাদেশের প্রথম শাসনতন্ত্র ঘোষিত হয়। এই শাসনতন্ত্রে জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও ভূমির অস্তিত্ব সংরক্ষণের যতটুকু আইনগত অধিকার “১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধিতে নিহিত ছিল তাও ক্ষুন্ন হয়ে যায়। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৮ সালের আজ পর্যন্ত এখানে উল্লেখের অবকাশ না থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে এর বেশী কিছু বিজ্ঞমহলের কাছে সবই প্রকাশ্য দিবালোকের মতো পরিস্কার।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে অতীতে যে কোন সময়ের তুলনায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে ব্যাপক হারে বেআইনী সেটেলার বাঙালি অনুপ্রবেশ ঘটে। ফলশ্রুতিতে ১৯৮৬ সালের ২জুলাই থেকে ১৯৮৯ সালের জুন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান পরিস্থিতিতে দফায় দফায় ৬২ হাজার জুম্ম নরনারী ভারতের মাটিতে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। তখনো পর্যন্ত স্নেহবাবুরা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয় নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় শরনার্থীরা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয় লাভ করে। লাগাতার ১২ বছর ধরে শরনার্থীরা আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করেছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আশি দশকে ¯স্নেহবাবুর সম্পাদিত, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে প্রচারিত “টেলিগ্রাফ” নামে একটি অনিয়মিত ইংরেজী প্রত্রিকা বের হতো। এই পত্রিকা পার্বত্য চট্টগ্রামের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনকে উৎসাহিত করেছিল। ১৯৮৭ সালের ২১ জুলাই আগরতলায় স্নেহ কুমার চাকমা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পত্রিকাটিও বন্ধ হয়ে যায়।

ষাট দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের ৫৪,০০০.০০ একর আবাদী জমি কাপ্তাই বাঁধে জলমগ্ন হওয়ার পিছনে ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কূট উদ্দেশ্য। কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্প প্রনয়ণ এবং বাস্তবায়ন দৃশ্যত: দেশের শিল্পোন্নয়ন হলেও মূলত: জুম্ম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিণত করণ তথা জুম্মজাতি সমূহের নির্মূলীকরণ উদ্দেশ্য-লক্ষই ছিল মুখ্য। তাই “কাপ্তাই বাঁধ মরণ ফাঁদ” শ্লোগানে ষাট দশকের ছাত্র-যুব সমাজের একমাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র সমিতি-এর ছাত্রদের প্রতিবাদে রাজপথ প্রকম্পিত হয়েছিল। আসলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পোন্নয়নের জন্য কাপ্তাই বাঁধ কোন প্রয়োজন ছিল না। বস্তুত একটি জাতিকে কীভাবে বিলুপ্তি ঘটাতে হয় তারই একটি মডেল ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কাপ্তাই হাড্রোলিক প্রজেক্ট। তখন থেকেই শুরু হওয়া জুম্মদের উদ্বাস্তু করণ প্রক্রিয়া আজো অব্যাহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সরকারী উদ্যোগে বনায়ন ও বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান গড়ার নামে জুম্মদের ভূমি অধিগ্রহণ ইত্যাদি হচ্ছে জাতিগত নির্মূলীকরণ কার্যক্রমের অংশ। তাই এই পার্বত্য চট্টগ্রামের আলাদা বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের লক্ষে এই কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য প্রতিরোধ সংগ্রামের কোন বিকল্প নেই।
(চলবে……..)

ধীর কুমার চাকমা; রাজনৈতিক কর্মী।

তথ্য সূত্র ও টীকা

*ব্রিটিশ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে চাকমা জাতির প্রতিরোধ সংগ্রাম (১৭৭২-১৯৯৮)
*সূত্রঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের ইতিকথা-শরদিন্দু শেখর চাকমা] * “জুম পাহাড়ে শান্তির ঝরনাধারা”-ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি,পৃঃ২৫, পৃঃ২৬,পৃঃ২৭)।
টীকাঃ
জাতি পরিচয়- “আজ থেকে ৫০০ বছর আগে ডি ব্যারোসের মানচিত্রে চাকমাদের যে বসতি অ ল দেখানো হয়েছে এখনো পর্যন্ত সেই অ লটিই চাকমাদের মূল ভূখন্ড রয়ে গেছে। ড.বুকানন যিনি চাকমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্বন্ধে বিস্তারিত লিখেছেন,তিনি তাঁর গ্রন্তের কোথাও চাকমাদের ঞৎরনব বা ঞৎরনবষ নামে উল্লেখ করেন নাই। তিনি চাকমাদের দধ হধঃরড়হ’ কিংবা ‘-ধ ঢ়বড়ঢ়ষব’ বলে উল্লেখ করেছেন। প্রখ্যাত পন্ডিত সতীশ ঘোষ তাঁর গ্রন্থে নামকরণ করেছেন ‘চাকমা জাতি’ নামে। (সূত্রঃ ব্রিটিশ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে চাকমা জাতির প্রতিরোধ সংগ্রাম(১৭৭২-১৭৯৮) অধ্যাপক ড.সুনীতি ভূষণ কানুন গো।

Back to top button