জাতীয়

সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে ভূমি দখলের প্রতিবাদ জানাল চিম্বুকের ম্রো জনগোষ্ঠী

চিম্বুকের পাদদেশ জুড়ে আমাদেরই বসতি এবং পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি। এই ভিটেমাটি থেকে ইতিপূর্বেই আমাদেরকে নানাভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আমরা আর এক ইঞ্চি ভূমিও দখল হতে দিবোনা বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন চিম্বুকের ম্রো জনগোষ্ঠীর নেতারা। গতকাল (৮ নভেম্বর ২০২০) সকালে বান্দরবানের চিম্বুকে আয়োজিত সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীতে এই হুশিয়ারী দেন সমাবেশের বক্তারা।

গতকাল রবিবার সকাল ১০ ঘটিকায় চিম্বুক পাহাড়ের কাপ্রু পাড়ায় ম্রো সম্প্রদায়ের ভূমিতে অবৈধভাবে পাঁচ তারকা ম্যারিয়ট হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনাকারী নিরাপত্তাবাহিনীর কল্যান সংস্থা ও আর এন্ড আর হোল্ডিংস (সিকদার গ্রুপ) কোম্পানির বিরুদ্ধে কালচারাল শোডাউনের মাধ্যমে চিম্বুক ভ্যালীর সকল ম্রো অধিবাসী একত্রে প্রতিবাদে নামেন। এই প্রতিবাদে চিম্বুকের প্রায় ৭০০ জনেরও অধিক মানুষ অংশ নেন। তারা দাবি করেছেন অতি শীঘ্রই সরকার ও প্রশাসন যেন এই অবৈধ দখলদারিদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জরুরি পদক্ষেপ নেন এবং তার পাশাপাশি তাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও জীবিকা বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারকে অনুরোধও করেন।

এখানে আরও উল্লেখ্য যে, ম্রো জনগোষ্ঠী বহু বছর ধরে নির্যাতিত হয়ে ও বিতাড়িত হয়ে এসেছেন বিভিন্ন অবৈধ দখলদারিদের কারণে।
মেনপং ম্রো ও থংপং ম্রোর যৌথ সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন গ্রামের কার্বারি ও মৌজার হেডম্যান।
উক্ত সমাবেশে সংহতি বক্তব্যে স্থানীয় ম্রো ছাত্র নেতা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য রেং ইয়ং ম্রো বলেন, নীলগিরি কোনদিন আমাদের নাম ছিল না, চন্দ্রপাহাড় কোনদিন আমরা চিনি না। আমরা ‘শোং নাম হুং’ নামে চিনেছি, আমরা ‘তেংপ্লং চূট’ নামে চিনেছি। এই ‘শোং নাম হুং’ কিভাবে চন্দ্রপাহাড় হয়ে যায়, এই ‘তেংপ্লং চূট’ কিভাবে নীলগিরি হয়ে যায়? এই জীবন নগর কিভাবে তোমাদের জীবন নগর হয়ে যায়? বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।এই ভূমি, এই মাটির প্রত্যেকটা ইঞ্চি আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি বলেও হুশিয়ারী দেন এই ছাত্রনেতা।
তিনি আরো বলেন, এই চিম্বুক পাহাড়ে একটাও প্রাইমারি স্কুল নেই, একটাও সরকারি হাই-স্কুল নেই। কোন মুখে আপনারা এখানে উন্নয়নের কথা বলেন, কোন মুখে বলেন আমরা ম্রোদের জন্য উন্নয়ন করছি, ম্রোদের উন্নতির জন্য পর্যটন করছি।
সমতল থেকে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আপনাদের ভিটেমাটিতে যদি কোন ম্রো জনগোষ্ঠী গিয়ে জায়গা দখল করে, আপনাদের জায়গায় গিয়ে যদি আমরা বলতাম – এটা আমদের পর্যটন স্পট, আপনাদের কেমন লাগত একবার নিজের বুকে হাত রেখে প্রশ্ন করুন। যেদিন আপনারা এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাবেন, সেদিন আমাদের প্রশ্নও বুঝতে পারবেন।

এছাড়াও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মার্মা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের প্রতিনিধি উটিং মার্মা, ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিলের প্রতিনিধি ইয়াঙান ম্রো সহ আরও অনেকে।

Back to top button