রাণী ইয়েন ইয়েন-এর উপর হামলার প্রতিবাদে রাঙামাটিতে মানবন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিলাইছড়িতে দুই সহোদর মারমা কিশোরীকে যৌন নিপীড়ন ও চাকমা রাণী য়েন য়েনসহ স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর হামলার ঘটনা সুষ্ঠ বিচারের দাবীতে বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে সন্মিলিত নারী সমাজ।
এদিকে, মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভসহকারে জেলার প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি দিতে চাইলে নারী নেত্রীদের পুলিশ বাঁধা দেয়। পরে কয়েকজন নারী নেত্রী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
মানবন্ধনে নারী নেতৃবৃন্দ চাকমা রাণী য়েন য়েন ও স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর হামলার এবং দুই সহোদর মারমা কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদসহ জড়িতদের শাস্তির দাবী জানান।
জেলা শিল্পকলা সামনে আধা ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালনকালে সন্মিলিত নারী সমাজ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন অংশ নেন। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্যে দেন জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ কমিটি রাঙামাটির সভাপতি নেত্রী টুকু তালুকদার ও উইমেন্স রিসোর্স নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ডনাই প্রু নেলী। এসময় রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান রীতা চাকমা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেত্রী কনিকা বড়ুয়া নারী নেত্রী সাগরিকা রোয়াজা, এ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, রাঙাবী তংচংগ্যা, উত্তরা ত্রিপুরা, সুগন্ধী চাকমা, অনিকা দেব বর্মন, এ্যাডভোকেট মাধবী মারমা নিকোলা তংচংগ্যা, সংযুক্তা চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন শেষে নারী নেত্রীরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের জন্য জেলা শিল্প কার্যালয় সামনে থেকে জেলা প্রশাসন চত্বর পর্ষন্ত বিক্ষোভসহকারে যেতে চাইলে এসময় পুলিশ বাঁধা দেয়। পরে নিরূপা দেওয়ানের নেতৃত্বে কয়েকজন নারী নেত্রীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে চাকমা রাণীর ওপর হামলা পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রথাগত প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদার ওপর হামলার সামিল। পাশাপাশি এ হামলা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল নারীর প্রতি চরম অবমাননাও উল্লেখ করে ৫ দফা দাবী জানানো হয়েছে। সেগুলো হল চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা রাণী য়েন য়েন ও স্বেচ্ছাসেবীদের উপর হামলার স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে অপরাধীদের বিচার, বিলাইছড়ির অরাছড়ি গ্রামে দুই সহোদর মারমা কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় এনে বিচার ও শাস্তি প্রদান, দ্ইু কিশোরদের তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান প্রথা অনুসারে সার্কেল চীফের হেফাজতে প্রদান এবং ঘটনার শিকার মারমা দুই কিশোরীর পরিবারের সদস্য ও চাকমা রাজ পরিবারসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা।
প্রধানমন্ত্রীর বরাবর দেয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে,২২ জানুয়ারী জানুয়ারী রাতে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়নের অরাছড়ি গ্রামে দুই সহোদর মারমা তরুনী ও কিশোরী দুজনের ম্েয একজনকে ধর্ষন ও অপরজনকে ধর্ষনের চেষ্টা করা হয়। তাদের বক্তব্যে মতে, এ অপরাধকর্মটি নিরাপত্তা বাহিনীর কতিপয় উচ্ছৃংখল সদস্য দ্বারা সংঘটিত হয়। আহত অবস্থায় ভুক্তভোগী তরুনী ও কিশোরীটি গ্রামবাসীদের সহায়তায় গত ২৩ জানুয়ারী রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তাদের পুলিশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা প্রহরায় হাসপাতালের একপি পরিত্যক্ত কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ঘটনার দুই মারমা সদোহর বোনদেরকে মানসিক মনোবল ফিরিয়ে আনার লক্ষে শুরু থেকে চাকমা রাণী য়েন য়েন ও স্বেচ্ছাসেবিরা তাদের সঙ্গ দিয়ে আসছিল। ঘটনার ২৪ ঘন্টার পর রাসেল মারমা নামে ভূইফোড় এক আত্বীয় দাবীকারী ব্যক্তি সংবাদ সন্মেলন পর থেকে তরুনীদের বাবা-মায়ের সাথে আর কোন যোগাযোগ ছিল না। তরুনীরা নিরাপত্তাহীনতার আশংকা করে নিরাপত্তা স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত আইনী ব্যবস্থাধীনে চাকমা সার্কেল চীফের হেফাজতে রাখার জন্য রাঙামাটি সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৮ ফেব্রুয়ারী সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, কোটের আদেশ সত্বেও সহিংসতার শিকার দুই কিশোরীকে জোর করে নেওয়ার প্রাক্কালে সেনা বাহিনীর সেজর তারভীর ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আলম সিদ্দির নেতৃত্বে দুই মারমা কিশোরীর সাথে অবস্থানরত চাকমা রাণী য়েন য়েন ও নারী স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর শারীরিক আক্রমণ চালানো হয়। ঘটনার সময় ওয়ার্ডে সাদা পোষাকধারী ও সাদা পোষাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিল। এ সদস্যদের সাথে আরো অনুমানিক ১০ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী সদস্য যোগ দেয়। এদের মধ্যে নারীরা ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকা এবং পুরুষরা মাস্ক পরা অবস্থায় ছিল। এসময় স্বেচ্ছাসেবীদের নারীকে চড়, লাথি,কিল ঘুষি মারা হয়। হামলায় নারী স্বেচ্ছা সেবীরা যৌন হেনস্থার শিকারও হয়। হালার সময় সৃষ্ট বিশৃংখলার সুযোগে চাকমা রাণী ও স্বেচ্ছাসেবীরা পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। আইন-শৃংখলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর এমন পাশবিক আচরণ ও রাণী য়েন য়েনসহ নারী স্বেচ্ছ সেবীদের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় সন্মিলিত নারী সমাজ হতবাক ও বিমুঢ়।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইউনিফর্মধারী পুলিশ ও সাদা পোষাকধারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনার শিকার দুই কিশোরীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে বাবা-মারর হেফাজতে দেয়ার কথা বলে হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক জৈনক অভিলাষ তংচংগ্যার বাসায় নিরবিচ্ছন্ন ও নিশ্ছিদ্র পুলিশি প্রহরায় অন্তরীণ রাখা হয়েছে।