জাতীয়

বাংলাদেশ কখনো ইসলামি দেশ হবে না, তালেবানি দেশ হবে না: বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক

বাংলাদেশ কখনো ইসলামি দেশ হবে না, তালেবানি দেশ হবে না, আল কায়েদার দেশ হবে না। আর পাকিস্তানও হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন মানিক চৌধুরী। ধর্ম অবমাননার জিগির তুলে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও কুমিল্লার মুরাদনগরের সংখ্যালঘু এলাকায় আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ, নারীনির্যাতন; ছাত্র-ছাত্রীদের ছাত্রত্ব বাতিলের অপপ্রয়াস, অধ্যাপক কুশল চক্রবতীকে হত্যার হুমকি, ধর্মপ্রাণ শহিদুন্নবীকে পিটিয়ে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে এবং গ্রেফতারকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের আশু মুক্তি, শো-কজ নোটিশ প্রত্যাহার, সংখ্যালঘু সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের দাবিতে আজ সকালে সারাদেশে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আহুত গণঅবস্থান কর্মসূচীতে অংশ হিসেবে ঢাকার শাহবাগে আয়োজিত গণঅবস্থানে এই কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, যারা এই (পাকিস্তার বানানোর) স্বপ্ন দেখেন তারা বঙ্গোপসাগরে নিক্ষিপ্ত হবে। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর দেশ, রবীন্দ্রনাথ, লালন শাহের দেশ বলেও তিনি হুশিয়ারী দেন। ত্রিশ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে গড়া দেশকে মৌলবাদের আখড়ায় পরিণত করতে দেয়া হবেনা বলেও মত দেন সাবেক এই বিচারপতি।

উক্ত অবস্থান কর্মসূচী ও সমাবেশে বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, আমরা রাজনীতি ধর্মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে দেখছি, মন্দির মঠ গির্জায় আগুন জ্বলতে দেখছি। বাড়িঘরে আগুন দেখছি। মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন দেশে এটা হতে পারে না।

আবেদ খান আরও বলেন, প্রশাসনে যতদিন রাজাকার আলবদররা থাকবে ততদিন আমরা বাংলাদেশের এই চিত্র দেখতে থাকবো। বাঙালি পরাজিত হয় না, বঙ্গবন্ধু পরাজিত হতে শেখাননি। ঘাতক রাজাকার-আলবদরদের হাতে দেশ বিপন্ন হতে পারে না। ওদের নির্মূল করা ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই।

উক্ত গণঅবস্থানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক। এ সময় অন্যতম সভাপতি সাবেক সাংসদ ও জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার ও অপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্মল রোজারিও উপস্থিত ছিলেন।

উক্ত গণঅবস্থানের সূচনায় কুমিল্লার মুরাদনগরে আক্রান্ত পরিবারের সদস্য প্রিয়াস কুমার শিব সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করেন। আক্রান্ত আরও কয়েকটি পরিবারের সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন বক্তা তাদের ভাষণে বলেন, দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতন বন্ধ না হলে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হবে। তারা সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের জোর দাবি জানান।

এদিকে ঐক্য পরিষদের আগাম ঘোষিত এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই শাহবাগে মিছিল সহকারে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ গণঅবস্থানে অংশ নেয়। সকাল দশটার শুরু হওয়া এই আয়োজনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ছাড়াও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশন, হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি, বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক ও বৌদ্ধ সমাজ, মাইনোরিটি রাইটস ফোরামসহ অসংখ্য সংখ্যালঘু সংগঠন গণঅবস্থানে যোগ দেয়। গণঅবস্থানশেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।

উক্ত সমাবেশের সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্যুত হতে পারে না। ধর্মনির্বিশেষে সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা রক্ষার দায়িত্বও সবাইকে নিতে হবে।

উক্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র, আলহাজ¦ মুহাম্মদ আলী ফারুকী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ¦ শাহ মুহাম্মদ আলী হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিতেশ চন্দ্র বাছার, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সঙ্গীতা ইমাম, ঐক্য পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য এ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, সাংবাদিক বাসুদেব ধর, দীপেন চ্যাটার্জী, জে এল ভৌমিক ও মঞ্জু ধর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, এ্যাড তাপস কুমার পাল ও শ্যামল কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড কিশোর রঞ্জন মন্ডল, রবীন্দ্র নাথ বসু, সুখেন্দু শেখর বৈদ্য, দিপংকর ঘোষ ও পদ্মাবতী দেবী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত কোড়াইয়া, জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্র নাথ বিশ^াস, শ্রীশ্রী ভোলানন্দগিরি আশ্রম ট্রাস্ট-এর সাধারণ সম্পাদক রঘুপতি সেন, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সচিব পলাশ কান্তি দে,

মহাসচিব ডা: এম.কে রায়, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র এ্যাডভোকেট সুমন রায়, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি পংকজ সাহা ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার তাপস কান্তি বল, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপালী চক্রবর্তী এবং বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী।

Back to top button