বাংলাদেশ এখনও সকল জাতিসত্তার মানুষের দেশ হতে পারেনি: চট্টগ্রামে আলোচনা সভায় বক্তাগণ
আইপিনিউজ, চট্টগ্রাম: গত ১৫ই সেপ্টেম্বর মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এম এন লারমা) ৮৫তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে চট্টগ্রামে এশিয়ান এস আর হোটেলের হল রুমে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চল’র উদ্যোগে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসী নেতা রবীন্দ্র ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আদর্শ চাকমার সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার দে, সাবেক শিক্ষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, সাবেক চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউশন, তাপস হোড়, সভাপতি বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা, পাহাড়ি ভট্টাচার্য, যুগ্ন সম্পাদক ঐক্য ন্যাপ,হ্লামিও মারমা, সভাপতি পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিসান তঞ্চঙ্গ্যা, সভাপতি, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম।
আলোচনা শুরুতে এম এন লারমার প্রতিকৃতিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এরপর এম এন লারমার সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন হিল ওইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রী আবৃত্তি দেওয়ান।
আলোচনায় রঞ্জিত কুমার দে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেটেলারদের নিয়ে গিয়ে সেখানে আদিবাসীদের সংখ্যালঘু করে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে দূর্বল করার প্রয়াস করা হয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর পড়েও বাংলাদেশ এখনও সকল জাতিসত্তার মানুষের দেশ হতে পারেনি। রাষ্ট্র আদিবাসীদের নাগরিক সম্মান দিতে পারেনি। পাহাড়ের আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এম এন লারমার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে মুক্তির সংগ্রামকে পরিচালিত করতে হবে।
দেলোয়ার মজুমদার বলেন, এম এন লারমা এক দূরদর্শী প্রজ্ঞাবান নেতা ছিলেন। তিনি অতি অল্প সময়ে অধিকার সম্পর্কে সোচ্চার হন। শাসকগোষ্ঠীর দমননীতির ফলে দেশের যে বৈচিত্র্য তা ধ্বংস হতে চলেছে, পাহাড়ের আদিবাসীরা দিন দিন সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে। অধিকারের প্রশ্নে তরুণদের সোচ্চার হয়ে জুম্ম জনগণের মুক্তির সংগ্রামে এম এন লারমার প্রদর্শিত মুক্তির পথে চলতে হবে। বর্তমান সরকারকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বৈষম্যের উর্ধ্বে গিয়ে সকলের দেশ গঠনে কাজ করতে হবে, আদিবাসীদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
তাপস হোড় বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে বৈষম্য দূরীকরণের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে দেশে এখনও বৈষম্য রয়ে গেছে। পাহাড় এবং সমতলের বৈষম্য দূরীকরণের সংগ্রামে এম এন লারমার আদর্শ আমাদের পথপ্রদর্শক। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার প্রদর্শিত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার চেতনা আজ প্রাসঙ্গিক।
পাহাড়ী ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরেক শাসনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে রাখা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে এম এন লারমাকে অনুশীলন করে তরুণদের মুক্তির সংগ্রামে ধাবিত হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে অবাস্তবায়িত রেখে শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে আরও জঠিল করে তুলেছে।
হ্লামিও মারমা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রেক্ষাপটে এম এন লারমার প্রদর্শিত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা আজ প্রাসঙ্গিক। তিনি সমগ্র বিশ্বের শোষিত নিপীড়ত মেহনতি মানুষের নেতা। তার বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরকে শাসকগোষ্ঠী ভয় পায়। তার জীবন সংগ্রামকে তরুন সমাজকে উপলব্ধি করে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যের মধ্য আলোচনা সভাটি সমাপ্ত হয়।