জাতীয়

পাহাড়ে সাম্প্রয়াদায়িক হামলার সুষ্ঠূ তদন্ত ও বিচারের দাবি সমতলের আদিবাসীদের

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও রাঙ্গামাটিতে আদিবাসীদের ওপর নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা, হত্যা ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রোজ শনিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সমতলের আদিবাসী ছাত্র-যুব ও সাধারণ জনগণ।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ক্রীড়া শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক উজ্জ্বল আজিম এর সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ সভাপতি টনি চিরান এর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ সাধারণ সম্পাদক ডাঃ গজেন্দ্রনাথ মাহাতো, আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, সংগীত শিল্পী কৃষ্ণকলি ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এর সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দিপ্তি দত্ত, আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য রিপন চন্দ্র বানাই, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি আন্তনী রেমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ, গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লিয়াং রিছিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল চাকমা, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি ডন যেত্রা, গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের প্রতিনিধি জানকি চিসিম প্রমুখ।

সমাবেশে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসি যুব ফোরামের অর্থ সম্পাদক অনন্যা দ্রং।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ দশক পেড়িয়ে এসেও আদিবাসীরা এখনো তাদের নুন্যতম মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আদিবাসীরা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে। পাহাড়ে এবং সমতলে আদিবাসীদের ভূমি বেদখল, উচ্ছেদ, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা দিনকে দিন আরও ভয়াবহ রুপ ধারণ করছে। আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য দাবিসমূহ উপস্থাপন করে আসছে। কিন্তু এমনাবস্থাতেও দেশের সকল স্থানে আদিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় পাহাড়ে এবং সমতলে আদিবাসীদের উপর জোর জুলুম, ধর্ষন ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক উপায়ে সমাধানের জন্য বিভিন্ন সরকারের সাথে ২৬ বার বৈঠকের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সাক্ষরিত হয়। কিন্তু চুক্তির ২৬ বছর পেড়িয়ে গেলেও বিগত সরকারসমূহ এই চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করেনি। বরং চুক্তি সাক্ষরের পরেও পাহাড়ে বিভিন্ন স্থানে আদিবাসীদের উপর হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যার মতন ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ের আদিবাসীদের নানাভাবে অধিকার বঞ্চিত করে ক্রমাগত প্রান্তিকতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সেটেলার বাঙালি কর্তৃক সংগঠিত সাম্প্রতিক ঘটনা তারই ধারবাহিকতা।

আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং আদিবাসী মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশ পূণর্গঠনের জন্য জুলাই গণুভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছিল সে আকাঙ্ক্ষা পূরণে বাংলাদেশের সকল মানুষকে যুক্ত করতে হবে। দেশের আদিবাসীসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে বাদ দিয়ে এবং দেশের আদিবাসীদের উপর বৈষম্য চলমান রেখে নতুন বাংলাদেশ সম্ভব নয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী বাঙ্গালী একত্রে কাধে কাধ রেখে অংশগ্রহন করেছিল। আজকে আদিবাসীদের উপর চলমান যে সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে এবং দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় – সমতলের আদিবাসীদের উপর যে বৈষম্য চলে আসছে তার বিরুদ্ধে আদিবাসী বাঙ্গালীসহ মানবিক বোধসম্পন্ন সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

সমাবেশ শেষে আদিবাসীরা মিছিল নিয়ে টিএসসি থেকে শাহবাগ প্রদক্ষিন করে টিএসসিতে শেষ করে। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে আদিবাসীদের সকল সমস্যার সমাধান না হলে আগামীতে পাহাড় এবং সমতলের দেশের সকল জনগনকে সাথে দুর্বার আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

Back to top button