
গতকাল ২২ জানুয়ারী বুধবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত “জাতীয় ঐক্য: কেন, কিসের ভিত্তিতে ও কোন পথে?” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা গণতান্ত্রিক সংস্কার ও জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে ইউনিটি ফর বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাদের পালানো প্রসঙ্গে বলেন ’এখন পর্যন্ত এই সরকার আর্মিকে জিজ্ঞেস করল না যে ৫ আগস্টের পর ক্যান্টনমেন্ট থেকে (আওয়ামী লীগের নেতারা) পালাল কীভাবে? সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জিজ্ঞাসা করেছে বলে আমরা শুনিনি। তার মানে সরকার আর্মিকে ভয় পায়। একটা স্বৈরতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের প্রশ্নে ১৫ বছর সহযোগিতা করলেও শেষ মুহূর্তে আর রক্তপাত না করার জন্য সেনাবাহিনী ছাত্র–জনতার পাশে দাঁড়িয়ে ভালো কাজ করেছে; অস্বীকার করার কিছু নাই।’
সম্প্রতি আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরো বলেন, ‘আপনার গায়ে লাগে কেন? হোয়াট্স ইউর প্রবলেম? আপনি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলে অপমান করেন কেন? ৭০০ কোটি মানুষ আছে পৃথিবীতে, বাংলাদেশের বাঙালি মাত্র আঠারো কোটি। সে হিসেবে আপনিও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী বললে আপনার খারাপ লাগে, আদিবাসীদের উপজাতি বলে অপমান করেন কেন? এটি যে অপমানসূচক আপনি বোঝেন না!
সেই সাথে সংস্কারপ্রক্রিয়ায় ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা উচিত বলে মনে করেন নূরুল কবীর। তিনি বলেন, “না-ভোট থাকলে রাজনৈতিক দল চাপের মধ্যে থাকবে। এক–এগারোর সরকার এটা যুক্ত করেছিল। পরের সরকার এটা বাদ দিয়েছিল। আমি মনে করি, না-ভোটের বিধান যুক্ত করা দরকার।’
‘ফ্যাসিবাদ ফ্যাসিবাদ বলতে বলতে নিজেরাই যাতে ফ্যাসিস্ট না হয়ে যাই, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে’-এই মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক স্নিগ্ধা রিজওয়ানা। তিনি আরো বলেন, আমরা যারা ফ্যাসিস্টকে বিদায় করলাম, তারাই যদি ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠি এটা হবে বড় পরাজয়।
আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, শিক্ষার্থী–জনতার আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্বে ছিলেন, তাঁদের কারও বর্তমান সরকারের অংশ হওয়া উচিত হয়নি। বাইরে থেকে যে চাপ সৃষ্টি করতে পারতেন, সেটা অনেকাংশে এখন কমে গেছে। এটা বাস্তবতা, সাহস করে অনেকে বলে না। তিনি বলেন, ভিন্ন ভিন্ন মত থাকবে, থাকতেই হবে। না থেকে কোনো উপায় নেই। চাঁদপুরে পদ্মা ও মেঘনা এক জায়গায় মিলিত হলেও দুটির স্রোতোধারা চলছে আলাদাভাবেই। কিন্তু নিজস্ব স্বকীয়তা কেউ হারায়নি। সুতরাং স্বকীয়তা বজায় রেখেই জাতীয় ঐক্য সম্ভব।
ঐক্য ধরে রাখতে না পারলে অভ্যুত্থান ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল কোনোভাবেই সরকারের ক্ষমতাবলে হওয়া উচিত নয়। এত বড় একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে যদি কোনো রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে, সেটা জনগণের ভেতর থেকে গড়ে ওঠা উচিত। ক্ষমতার ছায়ায় থেকে নয়।
দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ঠিক না হলে আইন করে কিছুই ঠিক করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক লে. জেনারেল (অব.) আমিনুল করিম।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধিকারকর্মী তুহিন খান। তিনি বলেন, কেবল রাজনৈতিক রেটোরিক বা আনুষ্ঠানিকতায় সীমিত না রেখে, ঐক্যের আলোচনাকে একটি ফলপ্রসূ পদক্ষেপে রূপান্তরিত করাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।