গঠিত হলো বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম: আহ্বায়ক অনন্ত বিকাশ ধামাই এবং সদস্য সচিব আন্তনী রেমা

বাংলাদেশের আদিবাসী অধিকার আন্দোলনকে আরো বেগবান করার জন্য বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অঙ্গসংগঠন হিসেবে গঠিত হল বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম। ২০০১ সালে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের আদিবাসী অধিকার আন্দোলনে নিয়ে আসে নতুন মাত্রা। পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের যুথবদ্ধ লড়াইয়ের বৃহত্তর প্লাটফর্ম হিসেবে এই সংগঠনটি এখনো বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। পাহাড়ের আদিবাসীদের লড়াইয়ের স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ মাইলফলক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা’র (সন্তু লারমা) নেতৃত্বে গঠিত এই সংগঠনটির যুব সংগঠন হিসেবে আজকে আত্মপ্রকাশ ঘটলো এই বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম এর ।
বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অনন্ত বিকাশ ধামাই এর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আন্তনী রেমা’র সঞ্চালনায় উক্ত সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আদিবাসী ফোরামের ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক রিপন চন্দ্র বানাই সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা আদিবাসী যুব নেতৃবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক রিপন চন্দ্র বানাই উক্ত সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের আদিবাসীদের অধিকারের জন্য এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। সেই অধিকার আদায়ের কাজকে আরো বেগবান করার জন্য বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম তার একটি যুব প্লাটফর্ম গঠনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই চেষ্টা আজকে সফলতার মুখ দেখতে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি তার আন্দোলনকে আরো বেগবান করার জন্য বাংলাদেশের আদিবাসী যুবদের জন্য একটি প্ল্টাফর্ম তৈরীর সিদ্ধান্তটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। এই প্লাটফর্মটি বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকে আরো সমৃদ্ধ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারন সম্পাদক অলীক মৃ বলেন, আদিবাসী যুবদের জন্য যে প্লাটফর্মটি হতে যাচ্ছে সেটা ছাত্র ও যুবদের জন্য একটি নতুন মাইলফলক। এই প্লাটফর্মকে আমরা সাদরে স্বাগত জানাই। আমরা যারা এখন আদিবাসী ছাত্রদের নিয়ে কাজ করছি আগামী দিনে আমরা এই যুব প্লাটফর্মে কাজ করবো এবং আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকে আরো বেগবান করার জন্য আমরা চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশের আদিবাসীদের অধিকার আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ সাবেক সাংসদ মানবেন্দ্র নাারায়ন লারমার বিপ্লবী স্মৃতিকে স্মরণ করে বাংলাদেশ আদিবাসী কালচারাল ফোরামের সাধারন সম্পাদক চন্দ্রা ত্রিপুরা বলেন, এই যুব ফোরাম বাংলাদেশের আদিবাসীদের অধিকার আন্দোলনের পথে আরো নতুনভাবে অনুপ্রেরণা নিয়ে আসবে। আন্দোলনকে আরো উজ্জ্বিবিত করবে। আমাদের সকল আদিবাসীদেরকে একই জায়গায় নিয়ে এসে একই সুরে অধিকারের কথা বলবার যে সাহস তা নিয়ে এই যুব ফোরাম কাজ করবে বলে আমি মনে করি।
তিনি আরো বলেন, আগামী দিনের আমাদের লড়াই হবে আদর্শিক লড়াই। আদিবাসীদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আদিবাসী ফোরাম যে স্পিরিট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে যেন কাজকে আরো সামনের দিকে অগ্রসর করার জন্য আদিবাসী যুবরা এই প্লাটফর্মে এসে আদিবাসী ফোরামকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
আদিবাসী ফোরামের সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, আদিবাসী ফোরামের লড়াইয়ের বিশ বছর হতে যাচ্ছে। এটি এখন পূর্ণ যৌবনে পরিণত হয়েছে। এই আন্দোলনে আমরা যারা নেতৃত্বে আছি তারা চাই আগামী দিনে তরুণ নেতৃত্ব তৈরী হোক। এই নেতৃত্ব তৈরীর জন্যই এই আদিবাসী যুব ফোরাম তৈরীর প্রচেষ্টা।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চলেছে। কিন্তু আমরা যেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম সে বাংলাদেশ পায়নি। আমরা চেয়েছিলাম বাঙালি,আদিবাসী, দলিত, বস্তিবাসী থেকে শুরু করে সবাই যেমন মানবিক মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে এমন একটি বাংলাদেশ। কিন্তু তা আসলে হয়ে ওঠেনি। নাহলে লিবিয়ায় এত বাংলাদেশির হাহাকার, থাইল্যান্ডের জঙ্গলে এত বাংলাদেশীর লাশ কেন ?
তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেই ড্রাইভারের আলোচিত দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমরা এমন লুটপাতের বাংলাদেশ চাই নি। আমরা মানবিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সাংস্কৃতিক এক দেশ গড়তে চাই। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে এখনো বলা আছে বাংলাদেশের জনগণ জাতিতে বাঙালি। এটা খুবই দু:খজনক।তবে যারা মনে করছেন আদিবাসীদেরকে পরাজিত করে, শোষণ করে জিতে যাচ্ছেন আসলে তারা আদর্শিকভাবে হেরেই যাচ্ছেন। তাই নতুন সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করতে উদ্ধুদ্ধ হওয়ার জন্য আদিবাসী যুবদেরকে আহ্বানও জানান তিনি।
এছাড়াও দিনব্যাপী উক্ত আদিবাসী যুব সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ভূমি ও আইন বিষয়ক সম্পাদক উজ্জল আজিম, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জাতীয় আদিবাসী যুব পরিষদ এর সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক এর সমন্বয়ক ফাল্গুনী ত্রিপুরা, উক্ত নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাগাছাস, গাসু সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা আদিবাসী যুব নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলন শেষে অনন্ত বিকাশ ধামাইকে আহ্বায়ক ও আন্তনী রেমাকে সদস্য সচিব করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি আগামী ছয় মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে আদিবাসী অধিকার আন্দোলনকে আরো বেগবান করবে বলে বলা হয়।উক্ত আহ্বায়ক কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান আদিবাসী ফোরামের ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক রিপন চন্দ্র বানাই।