খাড়াছড়িতে শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগঃ নেটিজেনদের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে ক্ষুব্ধ চাকরি প্রত্যাশী এবং নেটিজেনরা সামাজিক যোগােযাগ মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করার জন্য আহবান জানিয়ে জিসান মিয়াজি নামক জনৈক ব্যক্তি একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে আগামীকালের মানববন্ধনে সংহতি জানাচ্ছি। পাশাপাশি আগামীকালের মানববন্ধনে সচেতন খাগড়াছড়িবাসীদেরকে অংশগ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছি।”
গতকাল খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের অধীনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূণ্যপদসমূহে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে অনেক অনুত্তীর্ণ প্রার্থীকে উত্তীর্ণ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া সহ নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উত্তাপিত হয়। ফলাফল প্রকাশের সাথে সাথেই সামাজিক যোগােযাগমাধ্যম সহ বিভিন্ন ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন চাকরি প্রত্যাশী ব্যক্তি এবং নেটিজেনরা।
রাজশাহী বিশ্বিবদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, প্রাইমারীতে সোমবার ভাইবা ছিল আমার। জেলাপরিষদের চেয়ারম্যানসহ ৩ জন পরীক্ষক ছিলেন আমার বোর্ডে। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জানার পর, প্রথমে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্যের নাম, স্থপতির নাম জিজ্ঞেস করেছিলেন এক্সটার্নাল পরীক্ষক। একে একে ৬-৭ টা ট্রান্সলেশন, ব্রিকস, জি-২০, জাতিসংঘ, ন্যাটো, একনেক, প্রথম কাগজের ব্যবহার, চায়ের আদি জন্মভূমি সম্পর্কে অনেকগুলো প্রশ্ন করা হয়েছিল আমাকে। ৩-৪ টা প্রশ্নের উত্তর পারিনি, আরেকটা প্রশ্নের উত্তর ভূল বলেছিলাম [এক্সটার্নাল পরীক্ষক সেটা শুধরে দিয়েছিলেন]। ১২-১৪ মিনিটের ভাইবাতে বাকি সব প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিয়েছিলাম আমি। এক্সটার্নাল স্যার আমার প্রশংসা করে চেয়ারম্যানকে বলেছিলেন, “স্যার, ছেলেটা ইনফরমেটিভ। অনেক কিছুই জানে।” চারদিক থেকে জেলা পরিষদের নিয়োগ নিয়ে অনেক নেতিবাচক কথা শোনার পরও ভাইবার পর আমার রেজাল্ট নিয়ে আশাবাদী ছিলাম। খানিক আগে রেজাল্ট দিল। রেজাল্টশিটে আমার রোল নেই। জানিনা পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন, অথরিটি কিভাবে করেছে। [ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আমার অঞ্চল শিক্ষার দিক থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে। এই অঞ্চলের শিক্ষা নিয়ে কাজ করার আগ্রহ ছিল আমার। সে সুযোগটা আপাতত হলোনা।]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, বহু প্রতীক্ষার অবসানের পর খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের চুড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ৷ ফলাফল নিয়ে সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে কিছু স্ট্যাটাস আর কমেন্ট দেখেই বুঝতে বাকি নেই যে, তিক্ত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এই নিয়োগের ফ্রন্ট সাইডের ব্যাকগ্রাউন্ড আপাতদৃষ্টিতে সাদা মনে হলেও পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড যে কত অন্ধকার তা আর বলাই বাহুল্য। যদিও এটা নতুন কিছু নয়। এখানকার দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত সবাই জানে এর ইতিহাস। ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদে যে সমস্ত দপ্তর/সেক্টর হস্তান্তরিত করা হয়েছে ; আজ পর্যন্ত জেলা পরিষদের অধীনে সেসব দপ্তরের অধীন চাকুরিতে নিয়োগে জেলা পরিষদ নুন্যতম বিতর্ক/সমালোচনা এড়িয়ে যেতে পারেনি। তার মধ্যে সবচেয়ে এই প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে এই পার্বত্য জেলা পরিষদ তথাকথিত জ্বালা পরিষদ নামেও অনেক আগে থেকেই পরিচিতি পেয়েছে।
এদিকে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মংসানু মারমা তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “চাকুরী প্রার্থীরা এতো দিন নীরব ছিল। কারণ কমবেশী সবাই টাকা জোগার করতে ব্যস্ত ছিল কিংবা নেতাদের পেছনে লবি করতে ব্যস্ত ছিল। এখন শুধু ব্যর্থরা মায়া কান্না করছে নাতো? প্রার্থীদের কেউ মেম্বারদেরকে, কেউ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের, কেউ শিক্ষা অফিসারকে ঘুষ দিয়েছে, কেউ চেয়ারম্যানের আশেপাশে থাকা লোকদের পেছনে টাকা দিয়েছে। টাকা দিয়ে কেউ পেয়েছে, কেউ পাইনি। যেমন জনগন, তেমন নেতা। জনগন এতো সৎ হলে এ চাকুরীর দাম ২০-২২ লক্ষ হলো কিভাবে? এর পরিণতি হলো কিছু নেতাদের দামী বাড়ি নির্মাণ, জায়গাজমি ক্রয়, বউ মেয়ের জন্য গয়না, অনুরুপভাবে কিছু পাতি নেতা ও সরকারী কর্মচারীদেরও।ন্যায় বিচার শুধু নিজের জন্য চাইলে হয় না। ন্যায্যতা চাইলে সবার জন্য চাইতে হয়। বিচার চাইবেন, আবার তাল গাছটা নিজের বলে দাবী করবেন তা কিন্তু হয় না। খাগড়াছড়ি বাসী হিসেবে আমি লজ্জিত।”
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা থোয়াক্যযাই চাক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য তিন জেলা পরিষদের বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। পার্বত্য চুক্তি অনুসারে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির কোনরকম তোয়াক্কা না করে শাসকশ্রেণীর মনোনীত প্রার্থীদের নিয়ে জেলা পরিষদ গুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে। এতে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা দিনদিন নাজুক হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুসারে জেলা পরিষদের নির্বাচন সহ অন্যান্য কার্যক্রমগুলি পরিচালনা করতে হবে।


